ঢাকা,বৃহস্পতিবার, ১৪ নভেম্বর ২০২৪

মহেশখালীতে নির্বাচনকে সামনে রেখে অবাধে তৈরি হচ্ছে দেশীয় অস্ত্র

mail.google.comআবদুর রাজ্জাক,মহেশখালী -১১ মার্চ :::

আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনকে সামনে রেখে কক্সবাজারের উপকুলীয় দ্বীপ উপজেলা মহেশখালীর বিভিন্ন ইউনিয়নের পাহাড়ের গহীন অরণ্যে সম্প্রতি বিভিন্ন অস্ত্র তৈরীর কারখানায় অবাধে তৈরী হচ্ছে দেশীয় তৈরী অস্ত্র ও গোলাবারুদ। কোন মতেই বন্ধ করা যাচ্ছে না এসব দেশীয় অস্ত্র তৈরী ও নানা রকম গোলাবারুদ উৎপাদন। বরং কারিগররা স্থান পাল্টিয়ে নিত্য নতুন জায়গায় ফের কারখানা স্থাপন করে সেখানে অবাধে তৈরী হচ্ছে এসব মরনাস্ত্র। র্দীঘ দিন ধরে দেশের বিভিন্ন স্থানে আতœগোপনে থাকা অস্ত্র তৈরীর কারিগররা দেশের বিভিন্ন স্থানে আসন্ন পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে জামায়াত শিবিরসহ বিভিন্ন জঙ্গি সংগঠন ও সন্ত্রাসী গ্রুপগুলোর কাছে এসব দেশীয় তৈরী অস্ত্র ও গোলাবারুদের চাহিদা বৃদ্ধি পাওয়ায় এবং দাম বেশী পাওয়ায় ফলে রাত-দিন পরিশ্রম করে তারা বিভিন্ন রকমের দেশীয় অস্ত্র তৈরী করে যাচ্ছে। এলাকার কিছু মুখোশধারী জনপ্রতিনিধি মহল তাদেরকে বিভিন্ন ভাবে সহায়তা করে যাচ্ছে বলে বিভিন্ন সূত্রে অভিযোগ পাওয়া গেছে। আইনশংখলা বাহিনী বিভিন্ন সময় অভিযান চালিয়ে গুটিকয়েক চুনিপুটি কিছু অস্ত্র কারিগরকে গ্রেফতার করতে পারলেও তাদের আর্থিক ভাবে সহায়তা ও আশ্রয় প্রশয়দানকারী মুখোশধারী গড়ফাদার ও অস্ত্র তৈরীর মুল কারিগররা রয়েছে বরাবরের মতই এখনো ধরা ছোঁয়ার বাইরে।

জানা যায়, উপজেলার বড় মহেশখালীর বড় ডেইল,কালারমারছড়ার ফকিরজুম পাড়া পাহাড়ে,শাপলাপুরের সোলতানÑকালাইয়া নামে খ্যাত পাহাড়ী জুম এলাকায় এসব অস্ত্র তৈরীর কারখানা রয়েছে বলে সংশ্লিষ্ট এলাকাবাসীর সাথে কথা বলে জানা যায়। সকাল থেকে একটানা সন্ধ্যা পর্যন্ত বিরতিহীন ভাবে তারা পাহাড়ের গভীরে তাদের আস্তানায় এসব অস্ত্র তৈরীর কাজ করে। তারা দিনের বেলায় অস্ত্র তৈরী করাকে বেশী নিরাপদ মনে করে। কারণ এলাকার বিভিন্ন জায়গা ও বিভিন্ন স্থানে তাদের একাধিক সোর্স থাকায় র‌্যাব,পুলিশ আসার আগাম খবর তারা মোবাইলের মাধ্যমে সোর্সের কাছ থেকে পেয়ে সতর্ক অথবা পালিয়ে যায়। ফলে রাত্রে ঝুঁকি নিয়ে তারা অস্ত্র তৈরীর কাজ করে না বলে জানান সুদক্ষ অস্ত্র তৈরীর কারিগর খুইল্লা। গহীন পাহাড়ে খোদাই করে দুই দিকে রাস্তা রেখে মনোরম পরিবেশে তারা ওয়ার্কসপের মত করে এ অস্ত্র তৈরীর কারখানাগুলো স্থাপন করে সে খানে এসব দেশীয় অস্ত্র তৈরী করে থাকে। এখানে রয়েছে বিভিন্ন প্রকার লোহার পাট,স্টীলের নল, ড্রিল মেশিন, গ্যাসের চুলা, কয়লা, লেইদ মেশিনসহ বিভিন্ন অস্ত্র ও গোলাবারুদ তৈরীর যন্ত্রপাতি। এখানে একটি অস্ত্র তৈরী করতে দেড় থেকে দুই হাজার টাকা খরচ হলেও সেটি স্থানীয়ভাবে ৪/৫ হাজার টাকায় এবং জেলাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে ৭/৮ হাজার টাকায় এসব দেশীয় তৈরী অস্ত্র বিক্রি হয়। তাদের রয়েছে একটি শক্তিশালী যোগাযোগ নেটওয়ার্ক। ওই নেটওয়ার্ক সাগর পথে চট্রগ্রাম ও ঢাকায় লবণ ও বিভিন্ন মালামাল পরিবহনের কার্গো ট্রলার, ফিশিং ট্রলার,লবণ বোঝাই ট্রাক ও লাকড়ীর গাড়ীর মাধ্যমে তারা রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় এসব অস্ত্র সরবরাহ ও বিক্রি করে।অপরদিকে তাদের রয়েছে কিছু স্বামী পরিত্যক্ষ ও বিপথগামী মহিলা সদস্য। বিশেষ করে সড়ক পথে দেশের বিভিন্ন স্থানে অস্ত্র পৌছে দেয়াসহ বেচাবিক্রির ব্যাপারে তারা মহিলাদেরকে বিশেষ ভাবে প্রাধান্য দিয়ে থাকে। কারণ মহিলাদেরকে সহজেই কেউ সন্দেহ করেনা। ফলে এসব মহিলারা বোরকা পড়ে মুখে নেকাব বেধেঁ তাদের ভ্যানটিব্যগসহ শরীরের বিভিন্নস্থানে এসব অস্ত্র লুকায়িত করে সহজেই স্থানীয় প্রশাসন ও আইনশংখলাবাহিনীর চোখকে ফাঁকি দিয়ে এসব অস্ত্র বিভিন্ন স্থানে পৌছে দেয়। আর এসব অস্ত্র তৈরীর কারখানাগুলোতে নিয়মিত আসা-যাওয়া রয়েছে হোয়ানক,নতুনবাজার,কালারমারছড়া উত্তর নলবিলা এলাকার দাগী সন্ত্রাসী ও একাধিক মামলার ফেরারী আসামীদের।

এ ব্যাপারে মহেশখালী থানার অফিসার ইনচার্জ বাবুল চন্দ্র বনিক বলেন, বাংলাদেশের মুল ভুখন্ড থেকে বিচ্ছিন্ন মহেশখালী দ্বীপ পাহাড়ী জনপদ হওয়ার কারণে আইনশৃংখলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা এসব অস্ত্র তৈরীর কারখানার সন্ধান না জানলেও ওসব এলাকার স্থানীয় প্রশাসন ও জনপ্রতিনিধিরা কিন্তু সব কিছুই জানেন কোথায় কোন স্থানে কোন পাহাড়ে এসব অস্ত্র তৈরী হচ্ছে। সে ক্ষেত্রে এলাকার জনপ্রতিনিধি ও স্থানীয় লোকজন যদি দেশের বৃহৎ স্বার্থে আইনর্শংখলা বাহিনীকে এসব অস্ত্র তৈরীর কারখানার তথ্য দেয় তাহলে এক মাােসর মধ্যে মহেশখালীর সব অস্ত্র তৈরীর কারখানায় অভিযান চালিয়ে এসব দেশীয় তৈরী অস্ত্র উদ্ধার,কারখানাগুলি ধ্বংস ও অস্ত্র তৈরীর কারিগরদের আটক করা সম্ভব হবে বলে তিনি জানান। তার পরেও নির্বাচনকে সামনে রেখে অস্ত্র কারিগর ও দাগী সন্ত্রাসীরা মাথাচড়া দিয়ে উঠতে না পারে সে জন্য পুলিশি টহল ও অভিযান জোরদার রয়েছে। অস্ত্রের ফাইল ছবি ।

পাঠকের মতামত: